যারা বাংলাদেশের রাজনীতির খোঁজ খবর রাখেন তারা সকলেই ওলামা লীগ নামের একটি সংগঠনের নাম নিশ্চয়ই শুনেছেন, তারা হঠাত করেই মাঝে মধ্যে উদয় হয় এবং কিছু ফতোয়া যারই করে আবার গর্তে লুকিয়ে পড়ে। আর এসবের কারনেই তারা দিনদিন অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বিভিন্ন ধরনের ওয়াজ মাহফিলে যেমন করে হুজুরদের ডেকে নিয়ে আসা হয় সব উদ্ভব ওয়াজ শোনাবার জন্য তেমনি এই ওলামা লীগের হুজুররাও ক্ষেত্র বিশেষে ডাক পেয়ে তাদের আজগুবি বাণী প্রসব করে যান। তবে এই ডাক যারা দেন তাদের আবার আমরা রাজনীতির মাঠে খেলাধূলা করতে দেখি। বিশেষ খানাপিনা, জমি-জমা আর টাকা-পয়সা উপহার দিয়ে এই ওলামা লীগকে ডেকে আনা হয়।এখন প্রশ্ন আসতে পারে, কে এই ওলামা লীগ আর কি এমন তাদের ক্ষমতা?
বলে রাখা ভালো এই ওলামা লীগের নামের আগে কিন্তু আওয়ামী শব্দটি ব্যবহার করা হয়। তার মানে কি এটি আওয়ামী লীগের কোন অঙ্গ সংগঠন? প্রশ্ন কিন্তু উঁকি খাচ্ছে সবার মনে, তবে উত্তর দেবার বেলায় কর্তাব্যক্তিদের পাওয়া যায় না। উল্টো তারা জনমনে তৈরি করেন বিভ্রান্তি। এই যেমন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক হানিফ বলেছেন, ওলামা লীগ স্পষ্ট করে বলেছেন এর সাথে তার নিজের দলের কোন সম্পর্ক নেই। এটি নাকি বাটপারদের একটি সংগঠন। খুবই ভালো কথা, মেনে নিলাম এ সংগঠনের কাজ হল বাটপারি করা। এখন আমার মতো অবুঝের মনে একটা প্রশ্ন খালি ঘুরপাক খায় আর তা হলো, বিএনপি কিংবা জামাত যখন কোন মিছিল কিংবা মিটিং করতে চায়, পুলিশী বাধার কারণে তা আর সম্ভব হয় না। তাহলে তো ওলামা লীগের মতো বাটপার একটা দলের ক্ষেত্রে পুলিশের কড়াকড়ি আরোও বেশী হওয়ার কথা, তাই না?
ওলামা লীগের সদস্যরা হলো মূলত আলেম আর ওলামারাই। এরা বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষক, মুয়াজ্জিন, কাজী আর মসজিদের ইমাম। এদের নেতারা সরাসরি সহযোগীতা পাচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছ থেকে। আমাদের সবারই জানা, আমাদের দেশে ধর্ম এখনও কতটা স্পর্শকাতর একটা বিষয়। এখানে কথায় কথায় মানুষের অনুভূতিতে একটা অদৃশ্য আঘাত অনুভূত হয় কারণে-অকারণে। জামাত আর শিবিরের কাউন্টার পার্ট হিসেবে এই ওলামা লীগের উদ্ভাবন। যাদেরকে দিনে দিনে আশকারা দিয়ে মাথায় তুলে রাখা হয়েছে। ধর্ম নিয়ে তারা যে ভণ্ডামী আর ব্যবসা করে পেট চালায় আর সেই সাথে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার দিকে দেশকে ঠেলে দেয় তার প্রমাণ মিলেছে তাদের কাজে। এই ওলামা লীগের একাংশই কিন্তু আমাদের সার্বজনীন উৎসব বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখকে ইসলাম বিরোধী আর হিন্দুয়ানি উৎসব বলে এটি বয়কট করার আহবান জানান। সেই সাথে সকল নারীদের এই উৎসবে শামিল না হতে বারণ করেছে হেফাজত ও ওলামা লীগ একসাথে।
বগুড়ার সোনাতলা সিনিয়র ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসায় অধ্যক্ষ ও উপজেলা ওলামা লীগের সভাপতি ফজলুল করিমকে মাদ্রাসার এক ছাত্রীকে ধর্ষণের সময় আপত্তিকর অবস্থায় আটক করা হয়েছে। পরে পুলিশ ঐ অধ্যক্ষকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। থানা হেফাজতে থাকা ভুক্তভোগী ছাত্রী জানান , তাকে ডেকে নিয়ে জোর করে ধর্ষণ করা হয়েছে । এই হলো ওলামা লীগ যারা মিনিটে মিনিটে ধর্মের বুলি আওড়ায়। বিনা পয়সায় হজে যাওয়ার সুযোগ, কাজী ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, ইসলামী ফাউন্ডেশন ও বায়তুল মোকাররমের পদ হাসিল করা সহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা আদায় নিয়ে এরই মাঝে ওলামা লীগের মতো ভুইফোঁড় সংগঠনের মাঝে তৈরি হয়েছে বিভক্তি। ধর্ম নিয়ে এরা রীতিমত ব্যবসা করে বেড়াচ্ছে্ সর্বত্র।অথচ এদেরকে কিছু বলার কারো সাহস নেই। এদের ভোটে কাছে নাকি বিশাল ভোট ব্যাংক আছে যার কারণে হয়তো গদি মিস হয়ে যাওয়ার ভয়ে কেউ তাদের কার্যকলাপে একটা বাধাও দেয় না।
শ্যামল কান্তির মতো শিক্ষকরা সংসদ সদস্যদের দ্বারা অপদস্থ আর নির্যাতনের শিকার হওয়ার পরও ওলামা লীগ নামের কথিত এই সংগঠনটি সেই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে তার শাস্তি দাবী করেন। এই ধরনের সংগঠন মুখে শান্তির বাণী প্রচার করার কথা বললেও ভেতরে ভেতরে জনগণের মাঝে সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়িয়ে দিতে ব্যস্ত। সরকার যদি এই সংগঠনটিকে কোন আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি নাই দিয়ে থাকে তবে কেনো তাদের কোন কার্যকলাপে কোন ধরনের আওয়াজ সরকার তুলছে না, কিসের ভয়ে, কিসের জয়ে? “সর্প হয়ে দংশন আর ওঝা হয়ে ঝাড়ার” বহুল প্রচলিত এই ফর্মুলা খুব ভালো করেই রপ্ত করে ফেলেছে আওয়ামী ওলামা লীগ………এদের থেকে সাবধান।